উপন্যাস হলো গদ্যে লেখা দীর্ঘাবয়ব বর্ণনাত্মক কথাসাহিত্য। সমাজ-সংসারের নর-নারীর জীবন সংগ্রামের ইতিবৃত্ত নিয়ে উপন্যাস রচিত হয়। আধুনিক পৃথিবীর মানুষের সব আশা-আকাঙ্খা, বেদনা, বিরহ, বিচ্ছেদের সাহিত্যরুপ হলো উপন্যাস। উপন্যাসে পরিবেশ বর্ণনা, প্লট, চরিত্র, সংলাপ ইত্যাদি যখন মানুষের জীবনের কাহিনিকে সুন্দর ও স্বার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলে তখন উপন্যাসটি হয় স্বার্থক উপন্যাস। কবিতা, নাটক, ছোটগল্পের মতোই উপন্যাস সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। আধুনিক সাহিত্যে এটি তুলনামূলক নতুন আঙ্গিক ও জনপ্রিয়।
উপন্যাস এমন একটি মাধ্যম যেখানে বিস্তারিত বর্ণনা দেবার সুযোগ থাকে। উপন্যাসের ভিত্তি একটি দীর্ঘকাহিনি। যেখানে মানব-মানবী তথা ব্যক্তির সুখ-দুখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-স্বপ্নভঙ্গ, ঘৃণা-ভালোবাসা ইত্যাদির প্রাধান্য লাভ করে। উপন্যাসের প্লট বা কাহিনি হয় সুপরিকল্পিত। ঔপন্যাসিক তার উপন্যাসে এমনভাবে চরিত্র সৃষ্টি করেন যে, তারা হয়ে উঠে পাঠকের চেনা জগতের বাসিন্দা বা অতিপরিচিতজন। পাঠক একটি উপন্যাসের মধ্যে একই সঙ্গে জীবনের চিত্র ও জীবনের দর্শন এই দুইকে খুঁজে বেড়ান।
“অবশেষে কথা রাখোনি” এমনি একটি উপন্যাস। মানব-মানবীর দরদমাখা আবেগ, প্রেম ও ভালোবাসার এক সাজানো চিত্রপট। ঔপন্যাসিক এস.ডি সুব্রত তাঁর শৈল্পিক ভাবনায় সাঁজিয়েছেন তার সুবিশাল কাহিনি, শিল্পসম্মত প্লট, জীবন্ত চরিত্র আর দরদমাখা প্রেমময় সংলাপের সম্মিলিত উপন্যাস “অবশেষে কথা রাখোনি”।
এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন স্কুল শিক্ষক সু্বীর ও তাঁর সহকর্মী নাহিদা। সুবীরের বিশেষ পরিচয় তিনি একজন লেখক। স্কুলে শিক্ষকতা করার সুবাদে পরিচয় হয় নাহিদার সাথে। একই স্কুলে চাকরি করেন সুবীর নাহিদা। সুবীরের জীবনের কিছু দূঃখবোধ নাহিদার অন্তরে প্রভাব ফেলে। নাহিদা সুবীরকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে দূর্বল হয়ে পড়ে সুবীরের প্রতি। সুবীরের মেধা, বিচক্ষণতা, সরলতার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন নাহিদা। তৈরী হয় তাঁর প্রতি মায়া তারপর ভালো লাগা, মোহ থেকে ভালোবাসা। যার পিছনে কাজ করে দরদমাখা-আবেগ।
সুবীর একটি বাড়িতে লজিং থাকেন। সেখানকার তাঁর কাকিমা স্বপ্ন দেখেন তাঁকে নিয়ে। কাকিমা তাঁর মেয়ে নোভাকে সুবীরের সাথে বিয়ে দিয়ে মেয়েকে সুখী দেখতে চান। এখানে ঔপন্যাসিক এস.ডি সুব্রত অত্যন্ত সুদক্ষ ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন তাঁর সৃষ্টিশীল লেখায়। তিনি পাঠকের মনে জন্ম দিয়েছেন আকাঙ্ক্ষা, পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগে “সুবীর কি নোভাকে পছন্দ করতো? কিংবা নোভা কি চাইতো সুবীর তাঁর জীবনসঙ্গী হোক”? নোভার ভাইয়ের উগ্রবাদীতা বারবার আহত করে পাঠকের হৃদয়। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করে…! সুবীরের মতো একজন মহৎ মনের মানুষের প্রতি তাঁর অপপ্রচার, তাঁর উগ্রভাব কষ্ট দেয় পাঠককে। সমাজ বাস্তবিকতা তথা মানবিক মূল্যবোধের এ চিত্রটি সুন্দনভাবেই এঁকেছেন ঔপন্যাসিক এস.ডি সুব্রত।
“ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড় বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম তবুও কথা রাখেনি বরুণা” সুনীলের কথা রাখেনি বরুণা। ঔপন্যাসিক এস.ডি সুব্রত’র উপন্যাসে সুবীরের কথা রাখেনি নাহিদা। সুবীরের সাথে নাহিদার মিলেনের মাঝখানে ছিলো এক বিশাল দেয়াল। এ দেয়াল ধর্মের দেয়াল। সুবীর আর নাহিদা দুজন দুধর্মের ছিলেন। এটা তাদের মিলনের প্রাচীর!
সুবীরের প্রতি নাহিদার অতি কেয়ারিং-এ ভালোবাসার চেয়ে আবেগই ছিলো বেশি পাঠক তা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। সকল বাঁধা বিপত্তি পেরিয়েও সুবীর নাহিদাকে ভালোবেসে ফেলে। স্বপ্ন দেখে জীবন সাজাতে কিন্তু নাহিদা কথা রাখেনি। একটা দরদমাখা আবেগের অকাল বিচ্ছেদের সুর বাঁজে বড়ো অসময়ে। যা পাঠককে মনে বিরহ-বেদনার গান শোনায়।
ঔপন্যাসিক এস.ডি সুব্রত তাঁর লেখায় পাঠকের মন জয় করার মতো অনেক সংলাপ দিয়েছেন।তার মধ্যে কিছু উদ্ধৃতি হলো-
“যে পাখি খাঁচা ছেড়ে উড়ে যায় তার কাছে সুখের প্রত্যাশা করা বৃথা” সত্যিই তাই! যে চলে যায় সে কি আর নিজের থাকে? পরের কাছে কি সুখ প্রত্যাশা করা যায়? “যে ভুলে সুখে আছে সেখানে অসুখের বীজ বুনে কি লাভ” যে চলে যেতে চায় তাকে যেতে দিতে হয়। ফিরানোর বৃথা চেষ্টা কেবল কষ্ট বাড়ায় রোমান্টিক সংলাপ আর সুনিপণ বর্ণনায় ভরপুর এ উপন্যাসটি পাঠকের মনের চাহিদা মেটাবে এ আমার বিশ্বাস।
ঔপন্যাসিক এস.ডি সুব্রত মূলত একজন কবি। তিনি লিখেন গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ। ঔপন্যাসিক হিসেবে তাঁর আবির্ভাব “অবশেষে কথা রাখোনি” উপন্যাসের মাধ্যমে। জল-জোছনার শহরের শাল্লা উপজেলায় জন্ম নেয়া এ লেখক নিজের যোগ্যতায় বাংলা সাহিত্যে নিজের অবস্থান তৈরী করে নিয়েছেন। তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য কাব্যন্থগুলো হলো-
“ফেলেছো কি চোখের জল”
“কেন মেঘ জমে”
“শিরোনামহীন”
” Nomadic Life”
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এ প্রকাশিত হয় উপন্যাস “অবশেষে কথা রাখোনি”! বইটি প্রকাশ করেছেন চৈতন্য প্রকাশ, প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ, বইটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করি। বইটি পাঠকের মন জয় করবে, মন জাগাবে এবং রয়েছে ময়জোগাবে এটা আমার বিশ্বাস।
Recent Comments