পরিণাম-পর্ব্ব : পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ
কিছুদিন পর পুণ্যবতী আনোয়ারার কামনায় তাহাদের বহির্বাটীতে দশ সহস্র মুদ্রাবায়ে এক পরম রমণীয় প্রকাণ্ড মস্জিদ নির্মিত হইল, এবং সর্বসাধারণের পানির ক্লেশ নিবারণের জন্য মস্জিদ সম্মুখে এক সুবৃহৎ পুষ্করিণী খনিত হইল। আনোয়ারা গ্রামের মেয়েদিগের সুশিক্ষার নিমিত্ত অন্তঃপুরপার্শ্বে এক সুন্দর অট্টালিকায় বালিকাবিদ্যালয় খুলিয়া স্বয়ং তাহাতে শিক্ষা দিতে লাগিল।
মস্জিদ ও পুষ্করিণী প্রতিষ্ঠিত করিয়া আনোয়ারা সেই পুণ্যকার্যের স্মরণার্থে স্বামীর নিকট মিলাদ উৎসবের প্রস্তাব করিয়াছিল, নুরুল এস্লামও আহ্লাদসহকারে স্ত্রীর প্রস্তাবের অনুমোদন করিয়াছিলেন। প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আপনারা বোধ হয় তাহা পূর্ব পরিচ্ছেদে যুবক যুবতীর কথোপকথন হইতেই বুঝিতে পারিয়াছেন।
যথাসময়ে নুরুল এস্লামের বাড়ীতে মস্জিদ মিলাদের ধূম পড়িয়া গেল। সে রাজসূয় উৎসবের বিবরণ লিখিয়া পাঠক পাঠিকাগণকে আর বিরক্ত করিতে চাহি না। তবে আপনারা জানিয়া রাখুন, আনোয়ারা এই ব্যাপারে যে ১০/১২ সের হরিদ্রা ব্যয়ের অনুমান করিয়াছিল, তাহার স্থলে অর্ধ মণ হরিদ্রা খরচ হইল। মিলাদ উৎসবে নুরুল এস্লাম ও আনোয়ারার যাবতীয় আত্মীয়স্বজন পরিচিত বন্ধুবান্ধব নিমন্ত্রিত হইয়া আসিলেন। কেবল স্বামী কাতর থাকা বশতঃ নুরুল এস্লামের ছোট ভগিনী মজিদা আসিতে পারে নাই। এই উৎসবে পুরুষমহলে উকিল সাহেব, অন্দর-মহলে হামিদা ব্যাপারের পরিপাটী বন্দোবস্ত করিতে সর্বাপেক্ষা বেশী পরিশ্রম করিয়াছিলেন। রতনদিয়ায় চতুঃপার্শ্বস্থ দশ বার গ্রামের লোক, বেলগাঁও বন্দরের যাবতীয় হিন্দু-মুসলমান, স্বয়ং জুটের ম্যানেজার সাহেব এই মহা মিলাদে নিমন্ত্রিত হইয়া আসিয়াছিলেন। তদ্ব্যতীত রবাহূত আনাহূত অগণিত লোক, এই মহোৎসবে উপস্থিত হইয়াছিল। সকলেই চতুর্বিধ রসপূরিত ভোজ্য তৃপ্তির সহিত ভোজন করিল। দীনহীন কাঙ্গালদিগকে যথাযোগ্য অর্থ ও বস্ত্র দান করা হইল। দানপ্রাপ্ত ভোক্তা হর্ষ বিহ্বলচিত্তে দলে দলে, ধন্য আনোয়ারা বিবি, ধন্য দেওয়ান সাহেব রবে প্রতিধ্বনি তুলিয়া রতনদিয়া মুখরিত করিয়া তুলিল। মলয়ানিল-সংযোগে পুষ্পসৌরভের ন্যায় প্রেমশীল দম্পতীর পূণ্যকাহিনী দেশ দেশান্তরে বিঘোষিত হইতে লাগিল।
Recent Comments