আমার মেয়ে বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণিতে পাঠ রতা।ঘরে মাঝে মধ্যেই পোস্টম্যান মহাশয় পত্র/পত্রিকা দিয়ে যান।মেয়েটি নেড়ে চেড়ে দেখে।নতুন বইয়ের ভেতর অদ্ভূত একটা সুন্দর গন্ধ আছে।আমার চোখের সামনে হেসে দাঁড়াল আমার ছেলে বেলা।নতুন বই পেলে মনে যে কি আনন্দ হতো,বলা মুশকিল ।একদিন দেখি বইয়ের আলমারি পাখির মতো ইচরিয়ে দিয়েছে কে?গিন্নীকে হাঁক দিতেই বলে উঠল,ঐ দেখ ঐ দেখ তোমার মেয়ের কাণ্ড।দুজনে হেসে উঠলাম।জানতে পারলাম।মাঝে মধ্যে ও বেছে বেছে ছড়া পত্রিকা গুলি পড়ে।চতুর্থ শ্রেণি,শিক্ষক মহাশয় বললেন,তোমার বাবা তো কবি?মেয়ে বলেছিল।হ্যাঁ স্যার,ঘরে এই এতো এতো বই আসে।স্যার বলেছিলেন:এ বছর সামনে রবীন্দ্র জয়ন্তীতে তুমি তোমার বাবার লেখা কবিতা আবৃত্তি করবে।সেদিন নাকি প্রধান শিক্ষক মহাশয়কে একটি ছড়া শুনিয়েছিল।খুব খুশি হয়েছিলেন।পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার আগেটায় সে বলল:বাবা গ্রামে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হবে আমি অংশ গ্রহণ করব।আমি বললাম:বেশতো ভালো কথা।মেয়ে বলব:কোনটা করব।আমি বললাম:যার খুশি কবিতা আবৃত্তি করবি।মেয়ে বলল ঠিক আছে।একটা খাতা এনে ধরিয়ে দিয়ে বলল:বাবা আমি বল মা ঠাম্মা কোথায় করব।এই ছড়াটি সদ্য লিখেছিলাম যা অপ্রকাশিত।আমি বললাম:তোর ভালো লেগেছে।মেয়ে বলল:খুব ভালো। অনুষ্ঠান শেষে মেয়ে একটি কাপ পেল।সে ভীষণ খুশি এবং উৎসাহিত হল।কয়েকদিন পর ঠিক বিকেল বেলা আমি খাটিয়ায় উঠোনে বসে আছি।মেয়ে এসে বলল:বাবা আমাকে কবিতা লেখা শিখিয়ে দেবে।আমি অবাক বিস্ময়ে তার মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।স্বাভাবিক ভাবে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো:বেটা কবিতা লিখতে শিখিয়ে দেওয়া যায় না।মেয়ে বলল:কেন?আমি বললাম:কবিতা লেখা শেখানোর কোন পাঠশালা নেই।মেয়ে বলল:তা হলে তুমি লেখ কি করে?আমি বললাম:কবিতা কাকে বলে আমিও জানি না বেটা।কি ভাবে লিখি তাও বুঝিয়ে বলতে পারব না।কি ভাবে আসে তাও না।বলতে পারিস লিখিয়ে নেয়।মনে যা আসে সেটাতেই হয়তো লিখিয়ে নেয়।আপনারা যেন এই বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করবেন না।কষ্ট পাব।একটা মাস যেতে না যেতে মেয়ে একটি কাগজ এনে বলল:দেখতো বাবা।কেমন হয়েছে।পড়ে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ ছিলাম।মেয়ে লিখছিল
এমন যদি হতো/মেয়ে
আমি ব্যাঙ হয়ে কাটব জলে সাঁতার
বৃষ্টিতে হতো না দরকার কালো ছাতার।
মা বকলে থাকতাম ডুবে জলের তলায়
ঘুরতাম যেথা খুশি পাখনা দুটি নাচায়।
কখনো পাখি হয়ে বসতাম গাছের ডালে
কাটিয়ে দিতাম দুপুর নাচের তালে তালে।
খেলাম পুতুল খেলা কেউ পেতো না খুঁজে
যখন তখন রূপ ধরতাম সুযোগ বুঝে বুঝে।
এমন যদি হতো জীবন জোনাক ধোঁকা ধোঁকা
বেঁচে যেতাম রূপ বদলে কে খেতো আর বোকা।
বার কতক পড়ার পর মেয়েকে বললাম।এটা তোর মাথায় এলো কি করে।মেয়ে বলল মা খুব বকছিল
তার থেকে কি ভাবে বাঁচা যায়।অমনি একটা ব্যাঙ চোখে পড়ল।লাইনটি চলে এল।কি ভাবে লিখলাম বলতে পারব না।আচ্ছা বেটা সাঁতার আর ছাতার শব্দদুটি কেন বসালি।মেয়ে বলল:তাও বলতে পারব না।কিন্তু দেখ বাবা সাঁতার আর ছাতার পাশাপাশি উচ্চারণটা বেশ সুন্দর লাগছে না ।যেন কানে এসে সঙ্গীত হয়ে বাজছে ।আমি ভাবলাম ঐ ভাবে মিল আনলেই বেশ চমৎকার হবে।
আমি বললাম:দারুণ দারুণ হয়েছে বেটা।গালে দিলাম কয়েটা স্নেহের চুম্বন।মেয়েটি উঠোনে ছড়িয়ে দিল খুশির নাচ মুদ্রা।
কবিতা বিষয়ক একটি অভিজ্ঞতা_চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী

Recent Comments