হে পাথর
ডাক্তারকে নায়ক ভেবে
সাজালি বাসর;
সে তো ছিল তোর
ঘোর,
হে পাথর।
যখন ফুরোয় নিশি,
রাত হয় ভোর:
সামনে দাঁড়ানো আমি
তোর…
তুই রোগী,
আমি ভুক্তভুগী;
ডাক্তার…?
নয় সে নায়ক,
খলনায়ক বড়জোর।
খেয়ে ডাববা
পরে ছালা-চট
জোব্বাজাব্বা…
আঁধারের সাথে সন্ধি:
আছিস তো গৃহবন্দী…!
হাতে-পায়ে-কানে বেড়ি,
গলায় কতক গয়না
ঝোলালেই কথা কয় না
সোনাময়না;
আগে ভাব,
আদর-সোহাগ,
তার পর তো চুমু;
রুমুঝুমু,
কিনিকিনি,
বিকিকিনি…
আকাশিনী,
কেঁপেছিলি তুই…
আমিও অথই;
তার আগে
কখনো তো
খুলিনি বিকিনি।
প্রেম ছাড়া পরিণয়,
কেউ সুখী হয়…?
ভাঙাচুড়ি
নেই জুড়ি,
এতটা অসুখ তোর
তবু সুহাসিনী…!
ডাক্তারকে নায়ক ভেবে
সাজালি বাসর…!
সে তো ছিল তোর
ঘোর,
হে পাথর…
পাথর কি বাজে রিনিঝিনি…!!!
…………………………………………..
মাকাল
মাকাল
মাকাল
মাকাল…
পড়েছে
এমন
আকাল:
আপেল থুয়ে সবাই
নিচ্ছে লুফে মাকাল…
ওপরেতে
রংচং,
ভেতরে
বর্জ্যে ভরা:
মাকাল
মাকাল
মাকাল…
তবু
মাকাল
প্রেমভোমরা…!!!
…………………………………………..
কেন বারবার কপালটা মোছ
তুমি প্রায়ই
কপালে
হাত দাও:
কপালটা মোছ…
নিমগ্ন
থাকতে
থাকতে
হঠাৎ
ঝাঁকুনি
খেয়ে
কেঁপে
ওঠ…!!
তারপর কপালটা মোছ।
যখন
মেসিনজারে
কথা হয়
ফেক আইডিতে
ওয়েবক্যামে…
দেখি
ভিডিও
ক্লিপে;
কিংবা
যখন
ঢাকায়
আসো…
কেন কপাল হাতরাও..?
কী মোছ…!!
তুমি তো
সিঁদুর
পর না,
এমনকি
টিপও;
এসিতে
থাক:
কখনো
ঘাম না…
কেন তবে
বারবার কপালটা মোছ…??
কথা
বলতে
বলতে
কিছুটা
আনমনা…
তারপর,
আচমকা
আঁতকে উঠে
তড়িঘড়ি
কপালটা মোছ:
কেন, কেন, কেন মোছ…!!!
আমার
হাতের
আঙুল
থেকে
যে রক্তটা
দিয়েছি
তোমাকে,
কখনো কি ফিরে চাই…???
তোমার কপালে তা নাই…
তবে
কেন
মোছ…!!!
…………………………………………..
একা
পৃথিবীতে
এমন লোকও
আছে,
যার কোনো
ভাই-বোন
নেই;
জন্মের পর
মা তাকে
ফেলে
চলে
গেছে…
বাবা গেছে আগে;
স্ত্রী,
সন্তান,
সন্ততি,
প্রেমিক কি
প্রেমিকাও…
তাতে কি…!!!
তাই বলে কি
সে
বাঁচে না…???
এই দেখো,
আমি:
সব গেছে…
তবু কি
হৃদয় খুলে
হাসি না…???
মনে কোরো:
তুমি
সেই লোক;
খাওদাও,
হাসো;
জীবনের মতো করে
বাঁচো…
সবাই
তোমাকে ছেড়ে
গেছে…???
তাতে কি…!!!
ও-সব
কিছু না…
…………………………………………..
এই সেই বাড়ি
এই সেই বাড়ি,
এখানে
তুমি থাকতে…
মানে:
তামেরা থাকতে…
বাবা-মা
চার ভাই
আর
তুমি।
সড়ক-দরজাটা
দেখা যাচ্ছে না…
রাস্তা দিয়ে
ঢুকতে
ডান দিকের
ইটসোলিং
যেখানটায়
থেমে গেছে,
ওটাই
আমার
পড়ার ঘর:
আমার জানালা…
তুমি
ওখানে
আসতে,
জানালার
শিক
ধরে
দাঁড়াতে:
কত-কী বাহানা…
বাম দিকটায়
ছিল
তোমাদের
বিশাল
গোলাপ বাগান:
তোমরা আসার আগে,
যারা এসেছিল
কিংবা
তারও আগে
যারা থাকত,
তারাই হয়তো
বাগানটা করেছিল…
আমি কিন্তু
সারাক্ষণ
খোলা রাখতাম
আমার জানালা:
গোলাপ
দেখার জন্য
নয়…
কী মিষ্টি
ছিল
ফুল
তোমার দু-চোখ,
তোমার খোঁচাখুঁচি
কাঁটা…!!!
এই সেই
হলুদ বাড়ি:
এর সামনে দাঁড়ালে
ডানে
যে বাড়িটা…
মানে:
কলোনির
সবচেয়ে
বড় বাড়িটা…
ওখানেই
আমি
থাকতাম;
বাড়িটার পেছনে
ছিল
ইনডোর লন,
ব্যাডমিন্টন কোর্ট…
তুমি আসতে,
আমরা খেলতাম;
আমরা মানে:
তুমি, আমি, ভাবি
আর রব খান।
হঠাৎ
বাজলে
জরুরি টেলিফোন,
রব খান
গাড়ি হাঁকিয়ে
বেরিয়ে যেতেন…
ভাবি হাসতেন,
বলতেন,
‘তোমরা খেলো,
আমার তো আর
কোনো অপশান
থাকল না।’
কখনো কখনো
বিকেলে
তুমি এসে দেখতে:
আমি নেই,
অন্যরা ঘুমে…
তুমি দুলতে
কোর্টের পাশের
স্টিলের দোলনায়,
যেখানটায় বসে
আমি
অপেক্ষায়
থাকতাম তোমার,
তাকিয়ে থাকতাম
অপর প্রান্তে
দু-বাড়ির
প্রাচীর-দরজায়…
কেমন লাগত
বলো তো সোনামণি…???
যখন
দোলনায় বসে বসে
আমার জন্য
অপেক্ষা করতে:
গুনতে
এক, দুই, তিন…
আমি আসছি না,
আমি আসছি না,
কেটে যাচ্ছে সময়:
এক আলোকবর্ষ থেকে
আরেক আলোকবর্ষ…
তবু তুমি
ভাবতে:
এই তো,
এই বুঝি
এসে পড়ছি
আমি…
…………………………………………..
আবার তোমাকে চাই
ফেলে আসা
ছবিগুলো
দেখলে
নিজেকে
মনে হয় না:
এ আমি যে
আমি…!!
আর,
তুমি:
আজকালকার তুমি…
কিছুতেই
মেলে না,
মাথায় খেলে না:
কী-করে তা
তুমি…!!!
একটা
মিথ্যা
আদলে,
একটা
মিথ্যা
মুখোশে
আসনি তো
রানি…???
হে আমার
ফেলে আসা
দিন,
হে আমার
হারানো সে
তুমি:
আবার তোমাকে চাই;
প্রান্তরের
পোড়ো
পাথরের মতো
প্রতীক্ষায়
পড়ে আছি
আমি…
…………………………………………..
দেহঘড়ি
এই যে
তোমাকে আমি
মনে করি
দেহঘড়ি:
টিক্-টিক্
ঠিকঠিক
সারাক্ষণ…
এতে কোনো
হাত নেই
আমার।
কে বলো
চট করে
হঠাৎ
প্রাণস্পন্দন
জাগিয়ে দেয়
ভ্রুণে!
সে-রকমই
তুমি বাজ,
বেজে চলো
আমার ভেতরে…
রক্তে
মাংসে
ধমনিতে
শিরায়
যকৃতে
লোমে
লোমকূপে
মগজে
মননে
চিন্তায়
চেতনায়
হৃৎপিণ্ডে
ঘুমে
জাগরণে
চেতনে
অবচেতনে
শ্বাসে
নিশ্বাসে
আলোতে
আঁধারে
কোষে-কোষে
রক্তকণিকায়…
সেই থেকে
আজো
পুড়ে মরি!
আমি
জানি না:
কবে তুমি
তোমার দু-চোখ
তুলে নেবে,
আর
আমি হয়ে যাব
অন্ধকার;
তারপর
নাই…
দেহঘড়ি,
দেহঘড়ি:
বলো তো
হৃদয়-নিম,
কবে আমি
তোমার পাতার
স্নানে
হয়ে যাব
মাটি আর ছাই…???
…………………………………………..
সুপারনোভা
সুপারনোভা,
হয়তো-বা
তোর
অনেক কষ্ট ছিল
বুকে;
ফোটেনি ও-মুখে…
তাই,
ভেঙে-ফেটে
তুষ তুষ…
বল হরি,
হরি বোল:
শ্মশানের ছাই!
আর কষ্ট নাই…
সুপারনোভা
সুপারনোভা,
ভালো কি
বেসেছিলি
শুকতারাটিকে…???
আজো সে
সন্ধ্যায়
চেয়ে থাকে
জানালার শিকে…!!!
…………………………………………..
বাইসাইকেল
তোমার একটা
বাইসাইকেল ছিল…
হালকা-পাতলা
ফিনফিনে মেয়ে,
তুমি তাতে
উড়ে উড়ে বেড়াতে;
যেন প্রজাপতি:
যেন এই পৃথিবীর
গোটাটাই তোমার;
কোথাও কোনো
ছিল না বাধা
কিংবা বিপত্তি।
তখন তোমরা
থাকতে কাপ্তাই,
তারপর
আমাদের
এখানে এলে;
যখন তুমি জানলে
আমি সাইকেল
চালাতে জানি না,
মুখটিপে হাসলে…
আজকাল
তোমার সে হাসিটা
খুব মনে পড়ে,
আমি কিন্তু
মোটেও হাসি না:
এ হৃদয় পোড়ে…!
এক যুগ,
দুই যুগ,
আড়াই যুগ…
ঘরে পড়ে
থাকতে থাকতে
তুমি বেশ
ভারী হয়ে গেছ…!!
তোমার লেখা
বইগুলো পড়ি:
প্রথমটা,
দ্বিতীয়টা…
আপাদমস্তক ঢাকা
জনবিচ্ছিন্ন
ছকেবাঁধা
দুর্বিষহ
সে জীবন…
যেন-বা সুচিত্রা সেন…!!!
আমি কিন্তু
সাইকেল
চালাতে জানি না,
তবু উড়ি:
পানিউড়ি;
তোমার
একটা
বাইসাইকেল
ছিল,
তুমি তাতে
দাপিয়ে বেড়াতে…
মনে পড়ে
আকাশিনী…???
…………………………………………..
সুনীলের ‘নীরা’র মতো
এই ‘নিম’
এই ‘মিরু’
এই যে
‘ফসলের নামে যার নাম’
এ-সবের
মানে কী!
তাহলে কি
সুনীলের ‘নীরা’র মতো
এর পিছে
আছে
অন্য কাহিনি?:
বলল হেসে
ইকবাল;
না, না…
চমকে উঠো না!
‘সে’ না, ‘সে’ না,
আসিফ্;
ভয় নেই,
আমি তাকে কিচ্ছু বলিনি…
Recent Comments