সাহিত্যের সন্নিহিতি : মৌল উচ্চারণে
সাহিত্য তথা কবিতার চন্দ্রিমা চাঁদনী সৌরভ আমার মনন -কানন আমোদিত করেছিলো সেই শৈশবে। তাঁকে বয়ে নিয়ে ছিলাম বিজ্ঞানের জটিল এবং হিসেব নিকেশময় ভর যৌবন তক।তার সাথে প্রেম, খুনসুটি, বিয়ে এবং প্রৌঢ়-পীড়িত জীবনের অলিগলি, সন্ধি-সন্ধিল-সৌগন্ধ-সম্পুটে… অজানা-অচেনা অস্পর্শের অনন্তে… জানি না কোথায় নিবৃত্তি, জানি না কোথায় প্যারাবোলা…
কবিতা লেখার জন্য ভাবের মেঘ-মেদুরতা যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন আড্ডার জমানো মাখন, সংঘ-সংরাগের মৌতাত-মিতালী-মুখরতা। ফরিদপুর হাইস্কুল জীবনে কবিতার জন্য লোকায়ত সাহিত্য সংস্কৃতি সংস্থার মৌ-মুখরতা, রাজেন্দ্র কলেজ কালীন সময়ে ক্রান্তিকাল সাহিত্য সংগঠনের মৌ-মাধুরীমা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রস-রসায়নের রসদ রভসে বিপ্র প্রাংশু-বিপরীত-মৌল-মূলের সৌন্দর্য আমি বিপুল ভাবে আলোড়িত হই। প্রতি সপ্তাহে আমাদের সাহিত্য আড্ডা জমতো টিএসসির সবুজ চত্বরে, কখনও টিএসসির কোন রুমে, কখনও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, কখনও বীর ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খাঁ মসজিদ চত্বরে, কখনও বা কোন কোন হলের কোন কোন রুমে। এগুলোর পরিচালক ছিলেন যথাক্রমে ড. মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুব, ড. মাহবুব মোরশেদ, ড. ওমর ফারুক, ড. মাহবুবুর রহমান, ডাঃ হোসেনুজ্জামান আল আমিন, ডাঃ সৈয়দ ওয়াজেদ এবং আমি। আমরা তখন অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর রেডিওতে প্রচার করার বিজ্ঞাপন দিতাম। আমাদের সাহিত্য আড্ডায় লেখা পড়ার পর তুমুল আলোচনা সমালোচনা হতো। এরপর এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সংগঠনটি আরও ব্যপকতা নিয়ে ঢাকা শহর কেন্দ্রিক হয়ে যায়।
আমি শিক্ষা জীবনের শেষ দিকে ঢাবিতে কবিতা সংগঠনের প্রবাহ সৃষ্টি করি। প্রবাহ সংগঠন করি। এটি এখনো বিদ্যমান।আমার ছাত্র জীবনে অর্থাৎ এমএসসি-র প্রারম্ভে প্রথম কবিতর বই “শ্বাপদ অরণ্যে অগ্নি শিশু” (১৯৮৩) প্রকাশ পায়। লেখা পড়া শেষ। রসায়নে এমএসসি পাশ করেছি দ্বিতীয় শ্রেণিতে দশম স্হান অধিকার করে। ইতোমধ্যে একটি কাব্য গ্রন্থও প্রকাশ পেয়েছে। বিপরীত প্রবাহে আরও অন্য কোথাও অন্য কোনখানে আমার সাহিত্যের আড্ডা চলছে।কিন্তু কতক্ষণ আর সাহিত্য আর আড্ডাবাজী করে চলবে? চাকরি বাকরি কোন কিছু একটাতো করতে হবে। ছাত্র জীবন শেষ গাটের পয়সাও শেষ। এখন তো আর বাবার কাছে মাসে মাসে খরচের টাকাও আনা যাবে না। সাহিত্যাঙ্গনে ইতোমধ্যে বন্ধু হয়ে গেছে মতিউর রহমান মল্লিক, আসাদ বিন হাফিজ, মুকুল চৌধুরী, বুলবুল সরওয়ার, আহমদ মতিউর রহমান, মুজতাহিদ ফারুকী, সৈয়দ মুসা রেজা, মহিউদ্দিন আকবর। বড়োদের মধ্যে কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল মান্নান সৈয়দ, কবি আল মাহমুদ, নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দিন আহমদ, কবি আবদুস সাত্তার, কবি আফজাল চৌধুরীসহ আরও অনেকে আমার খুব কাছের মানুষ হয়ে যান।
চাকরি করতে হলে ঢাকাসহ দেশ বিদেশের যে কোন যায়গা যেতে হবে। তাতে সাহিত্যের ক্ষতি হবে না তো! কি করবো চাকরি না সাহিত্য? নাকি চাকরি ও সাহিত্য দুটোই। বেশ দোলাচলে দুলছি। পাশ করতে করতে সাতাশ বছর দুমাস হয়ে যায়। আমার আর বিসি এস দেওয়া হল না। এসএসসি সার্টিফিকেটে ভুলক্রমে বয়স বেশি হয়ে যায়, তা আর এপিডেভিড করা হয়নি। আর হলেই বা কি। বিসিএসএ তা গ্রহণযোগ্য নয়। শেষ পর্যন্ত কিভাবে যেন বাড়ির উদ্দেশ্যে ফরিদপুর শহরে যাই। শহরে আমাদের বাসা তখন ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আমি ক্ষণিকা বোর্ডিংএ থেকে রাজবাড়ী আদর্শ গার্লস কলেজে রসায়নের লেকচারার পদে চাকরিতে জয়েন করলাম। মাসিক বেতন মাত্র সাত শত টাকা। মেয়েদের পড়াতে হবে বেশি বেতনের কি দরকার? নায়িকা গায়িকা দেখে দেখে পেটে বেশি খাবার ঢুকবে না। কলেজের পাশেই রাজনীতি বিজ্ঞানের সহকর্মী অধ্যাপক পেয়ে গেলাম। কি নাম যেনো। আমাকে খুব করে খাওয়ায়ে বল্লো, আপনার থাকতে অসুবিধা হলে আমাদের ঘরেই আমার সাথে থাকবেন। একমাত্র বোন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়ে। ও বাসায় থাকে না। মনে মনে ভাবলাম তা হলে থেকে কি লাভ? যা হোক আমি সেখানে থাকিনি। ফরিদ পুর শহর থেকে এসে কলেজ করি। এভাবে কয়েক মাস গেলো। আমি আবার গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম। মনটা সাহিত্য আড্ডার জন্য কবিতা চর্চার জন্য ঢাকা ঢাকা করছে।অথচ সাহিত্য, কাব্য করার জন্য অনেকেই মফস্বল শহর বা গ্রামীণ প্রকৃতিকে ভালো বাসে। আমার সাহিত্যের সন্নিহিতকোন বিনির্মিত হয়েছে যেনো রাজধানী ঢাকার রাজাসনে!
Recent Comments