দূরত্ব
কতদিন হয় চাঁদ দেখিনা,
তোমার হাতে হাত রাখিনা।
হয়না দেখা পাখির উড়াউড়ি
বুকের ভেতর ভীষণ ব্যাথা,
তোমায় দেখার ব্যাকুলতা করছে বাড়াবাড়ি।
প্রতিদিন যে বলতে ডেকে!
খুজ নিওনা, ফিরতে হবে দেরি।
অভিমানে কাটতো বেলা-
দিতাম শত আড়ি।
তবুও রোজ সময় মত ফিরে আসতে বাড়ী।
রোজ নিশীতে তারার মত!
উঠতে জ্বলে মিটমিটিয়ে-
ফিসফিসিয়ে কানের কাছে
বলতে কি সব লাজের কথা!
আমার ভীষণ লাগতো ভাল, অন্য রকম ভাললাগা।
প্রতিদিন যে ফাঁকি দিতে!
চাঁদ আনবো, পাখি দেবো ধরে।
চাঁদটা রোজ একলা ভাসে-
পাখিও যায় উড়ে।
তুমিই কেবল আমার থেকে চাঁদের মত দূরে
…………………………………………..
পাঠশালা ঘর
সাথীবর ডুবে মর, কারো প্রান নড়বড়!
ছিল যত নিজপর বাসায়া বানের স্রোতে,
অথৈ পাথারে এসে বানায়েছি ঘর।
অাষাঢ়ে বর্ষা নামে, শ্রাবণে প্লাবণ!
যেথা হিজল কদম করচের বন,
গ্রামগুলি ভাসে ডুবে চাঁদের মতন।
এ পাড়ে ডাকে মেঘ, ঐ পাড়ে ঝড়!
আসমান ভাইঙ্গা পানি পরে ঝর ঝর,
জলের তলে সব সলিল কবর।
আমার এই অচিন পুরে,
কেউ নাহি আসে ডরে!
হেথা শুধুই হাওর-বাওর।
বানবাসা জল মোর পাঠশালা ঘর।।
…………………………………………..
ঢাকার শহর
আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগীতায় লড়ছে,
হাজার হাজার দালান।
গাছগুলো নির্বাচক!
দর্শক গ্যালারিতে বাস ট্রাক মাইক্রো,
ভোট দিচ্ছে কল কারখানা শপিংমল।
দোকান পাট যত্তসব!
পথ হারিয়ে দুরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে
উল্লাসে দেখছে সব
রিক্সা অটো ভ্যান।
সম্প্রচার করতেছে সর্বত্র
দুই ধারের ডাস্টবিন!
কোথাও তিল ঠাঁই নাই!
অভাগা মানুষগুলো ভিড় ঠেলে,
পিপিলিকার মতো ছুটছে…
ঢাকার শহরে।
একটু অন্ন চাই ?
নির্মল বায়ু চাই ??
এই ব্যস্থ শহরে পরাস্থ সবাই।
গাছগুলো শুধুই নির্বাচক !!
…………………………………………..
ফিরে আসবো
ভোরের স্নিগ্ধতায়-
শিশির কণার কোমল পরশে,
ছুয়ে যাবো তোমায়।
কোন এক পৌষের সকালে।
রুদেলা দুপুরে-
গাছে ছায়ার শীতল হাওয়ায়,
তোমাকে জুড়ায়ে দিবো।
দক্ষিনা পবনে মিশে।
ক্লান্ত বিকাল, কিংবা
পড়ন্ত অবেলায় উত্তরের জানালার গ্রীলে
দেখবে আমি ঠাঁই দাড়িয়ে!
গোধুলির ঝিরি ঝিরি বাতাসে ভেসে-
ঝি ঝি পোকার ডানায় চড়ে।
কোন একদিন আমি ফিরে আসবো,
তোমাকে ছোঁয়ার অনন্ত ইচ্ছায়।
তুমি অনুভবে খুজে নিও
আমি আসবো, সত্যিই আসবো।
…………………………………………..
নীল পাড়ের সবুজ জমিন শাড়ী
এই শুন? একটা নীল পাড়ের সবুজ শাড়ী কিনে দিবে, সুতির।
তোমার তো অনেক শাড়ী, তবুও নীল?
হ্যাঁ। এই যে তুমি আকাশ দেখ, ঘোলা চশমায়।
তার গ্লাসটা পরিস্কার করে দেবো।
আজকাল বারান্দার ইজিচেয়ারে বসেই তুমি ঘুমিয়ে পরো!
বৃষ্টির ছিঁটেজলে তোমার মুখটা ভিজে উঠে।
সুতির আঁচলের ছোঁয়া তোমার ঘুমটা ভাঙবেনা।
তুমি কি আবারও প্রেমে ফেলবে আমায়?
রুপ দিয়েই তো কিনেছিলাম!
আদর দিয়েই না হয় বেঁচে দেই ঐ পাড়ে।
কি করে থাকবে একা?
এই ধরো, শাড়ীর আঁচলে লেগে থাকা তোমার চশমার ধুলো ঝেড়ে।
কিংবা তুমি যে রোজ আকাশে চিঠি লেখ,
সেই চিঠিগুলো পড়ে পড়ে।
কিনে দেবে প্রিয়?
একটা নীল পাড়ের সবুজ জমিন শাড়ী।।
…………………………………………..
কৃষকের ভাবনা
সারা দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে
যখন সন্ধা নামে,
আদুল গায়ে পুকুর পাড়ে
কৃষক বসে ভাবে
কতো কিছুই করার ছিল আজ
আর কত কাজ বাকি,
কতো ভাবনা মাথার ভেতর
মারে উকি-ঝুকি।
এবার ক্ষেতে কলাই দেব
সর্ষে দেবো পরে,
নিজের হাতে ফলাবো ফসল
খাবো বছর জুড়ে।
শীতল হাওয়ায় গাঁ জুড়ালো
তামুক ফুড়ালো হাতের,
ভাবলে কি আর কাজ ফুরাবে
করতে হবে নিজের।
…………………………………………..
জীবন তরী
ভবের তরে জনম ভরে
আশায় বেঁধে বুক,
করলাম কত বেচাকেনা
সুখের দামে দোখ।
সকল ছেড়ে উজান গাঁঙে
ভাসায়লাম নাও,
রৌদ্রে পুড়ি মেঘে ভিজি
নাওয়ের নাইকো ছেও।
ভব নদীর তীর ধরিয়া
কত ঘাটে যাই,
কোন ঘাটে লাগাইবো নাও
এমন ঘাট যে নাই!
চতুরদিকে একলা আমি
ভিতর বাহির জুরে,
শূন্য হাতে ফিরতে হবে
স্বাদের জনম ছেড়ে।
জীবন তরী বাইবো কত
নাইকো তত দম,
দমের মালিক ডাকছে সদা
সময় যে মোর কম।
সাঁঝের বেলায় আসলো জোয়ার
ভাসায়ে নিল সবি,
অকূলে ভাসাইলাম শেষে
আমার জীবন তরী।।
…………………………………………..
অপেক্ষার বিষ
তোমার উদাস হৃদয়ে-
আমার অপেক্ষার একটুখানি,
বিষ ঢেলে দিলাম।
যদি পোড়ায় তোমার মন?
জেনে নিও এমন বিষে,
জ্বলছি সারাক্ষণ।
কাজল কালো চোখে তোমার রেখেছিলাম চোখ,
হায় কেন যে অকারনে।
কি যানি এক বিষের বাণ,
বিঁধলো এসে মনে।
ব্যথাতুর সেই বিষের বাণে,
পুড়ে হইলাম সারা।
হৃদয় তোমার কঠিন বড়ই,
পাথর দিয়া গড়া।
আলতো করে ছুঁয়েছিলাম,
তোমার কোমল হাত।
সেই পরশের সুভাস যেন গো
বইছে নিশিত রাত।
চুপটি করে সরায়ে নিলে
চাওনি তুমি ফিরে।
সেদিন থেকেই তোমার পানে,
চলছি ধীরে ধীরে ।।
ডাকবে বলে প্রিয়-
জ্বালায়েছি আশার প্রদ্বীপ
শূন্য বালুরচরে।
অপেক্ষা… অপেক্ষা… অপেক্ষা…
মধুর অভিমান।
বিষ ঢেলে দিলাম তাই-
তুমিও জ্বলো কিছুক্ষণ ।।
…………………………………………..
বৃষ্টি বন্দনা
আজি তপ্ত-রুদ্র দুপুরে,
পুড়ছে দেহ।
মন জ্বলছে তৃষ্ণায়!
হোক না ক্ষান্ত, পিপাসার।
বৃষ্টি তোমাকে চাই?
দূরে ঐ দেখ বকুল-কদম-কেয়া সবিনয়ে বলিছে…
প্রশান্তির আষাঢ়, এসো হে ?
একটু ভিজবো আমি,
বৃষ্টি তোমাকে চাই??
…………………………………………..
বাদলা দিনে
বাদলা দিনে চাষার বউটি
ভাজে মুড়ি-চাল,
স্বামি তাহার থাকবে ঘরে-
করবে গপ্পো-গাল ।।
জেলে মাঝি ঘরে ফিরে
ফেলে হাতের কাজ,
আজ তাহারা বেরুবে না আর-
থাকতে গগণে সাঁজ ।।
পাখিরা সব লোকায় ডালে
ঘন পাতার আড়ে,
খালে বিলে মাছের ঝাঁক-
বসে চুপটি মেরে ।।
টিনের চালের ঝুন ঝুনা ঝুন
গাছের পাতার সাঁ সাঁ,
শীতল হাওয়া জুড়ায়ে দেয়-
মনের যত ব্যথা ।।
বৃষ্টি আমার ভাল লাগে-
মুগ্ধ করে বর্ষাপানি।
বানের জলে ভাসিয়ে দেই,
দুঃখ ঝরা গ্লানি ।।
Recent Comments