সকাল আসেনি
আমার সকাল শিরদাঁড়া স্রোতে ভেসে যায়
স্বপ্নগুলো হৃদয়ের আকাশে ডুকরে কাঁদে
অনুভূতিতে বাজে ব্যাথার কড়কড় ধ্বনি-
আর যখন চলন্ত বিমান দেখি
মরমে মরমে বেজে ওঠে
অন্তিম যাত্রার পদধ্বনি।
দুপুরের শরীরে পড়েছে
চাকা চাকা ফোসকা
তাই আজ গুমরে গুমরে রোদের উঠোনে
শীতল বাতাসের মর্মর আওয়াজ।
সন্ধ্যা বয়ে যায় হৃদয়ে ক্ষত নিয়ে
এক পশলা বৃষ্টির সিঁড়ি ভেঙে।
নিশিরাত তাকিয়ে প্রভাত পানে
হাঁড়হিম নিচের কোণে
জবুথবু হয়ে আজও আনমনে।
…………………………………………..
এমন করে বলো না
এমন করে বলোনা
আমি পারবো না
নীড় হারা পাখি আজও ওড়ে
ছায়ার বুক চিরে
নদী তীরে, শবের খোঁজে।
চাঁদ ডানা মেলে জড়িয়ে ধরে পৃথিবী
রাত জাগা সূর্যের আড়ে
গন্তব্য স্থানে ছুঁটে চলে ট্রেন
ফুটন্ত ভাতের শহরে…
এমন করে বলোনা, আমি পারবো না!
পরিযায়ী শ্রমিকের রক্ত স্নাত পথ ভেঙে
জলের উঠোনে বিষণ্ণ রোদ আছড়ে পড়ে
পুরোনো বিছানা নতুন করে বিছিয়ে শুবে
আহত ইতিহাসের কলঙ্কিত পাতায়
এমন করে বলোনা, পারবো না!
…………………………………………..
ঝলসানো স্বপ্ন
আধপোড়া রুটির দিকে তাকিয়ে
ক্লান্ত দিন যায় বয়ে
অন্ধকারের সিঁড়ি বেয়ে।
স্বপ্নের জাল আজও হয়নি বোনা
বিনাবৃষ্টিতে হয়েছে বন্যা।
কালো রাতের তারা
দিনের কাছে ধর্ষিত হয়ে
মেঘের আড়ে গেছে চলে
নতুন হয়ে আসবে বলে।
হতাশার গর্ভ হতে প্রস্রবণ আকাক্ষায়!
নত আকাশ গাভীর মতো চড়ে
সময়ের গর্ভে ডাকেনা আমায় কাছে
যেখানে বুড়ি মা বসে চড়কা কাটে।
…………………………………………..
আর এসো না ফিরে
উঠোনে মাদুর পেতে বসবো কিছুক্ষণ
গচ্ছিত আকাঙ্ক্ষায় তোমায় অভ্যথর্না জানাব
কিন্তু ভাবিনি এমন ভাবে আসবে!
বিকলাঙ্গকে হত্যা করতে
সাবান নিজেই আত্মহত্যা করে
তোমায় বাঁচাতে ফাঁসির দড়ি থেকে।
তখন বৃষ্টি নেমে আসে
বাতাসের ভাঙ্গা বারান্দায়
ভিজিয়ে দিয়ে যায় খোলা চুল
বিদ্যুৎ-এর ঝলকানিতে আঁতকে উঠে মৃত্যু
এমন করে আর এসোনা
ক্রন্দন পান্তা ভাতের থালায়
দিন জাগা আঁধারের ভিড়ে।
…………………………………………..
ভাতের থালায়
থালায় দেখি করুণ আর্তনাদ
প্রখর রোদে ঝলসে যাচ্ছে ক্ষুধা
বাতাস বয়ে আনে গন্ধ
তিলে তিলে শুকিয়ে গেছে
অমৃত সুধা।
যন্ত্রনার রক্ত কবিতায় ঠিকরে পড়ে
ধর্ষিত কবিতা শব্দের আড়ে।
সূর্য গেছে ডুবে সাগরের অতলতলে
উত্তাল ঢেউয়ে আঁধার আসে উঠে!
সভ্যতা দৌড়ায় সভ্যতা গলি পথে
নতুন অম্বেষণ আসবে কবে?
ইতিহাসের গর্ভ থেকে
সুদীর্ঘ আলোক রশ্মির এটা
খোলা জানালা ছেঁড়া পাতায়
ইতিহাস হতে।
…………………………………………..
সূর্যের প্রথম ছোঁয়া
আরও একটি সূ্র্যের ছোঁয়া পেয়ে
কুঁকড়ে যাওয়া হৃদয়ের পাঁপড়ি
চনাক করে উঠলো
মাদার গাছের তলে দুর্বা ঘাসের আড়ে
শুঁয়োপোকা বাতাসের ঘরে খেলা করে।
উন্মাদ রোদ বাহু তুলে ছুঁয়ে আছে
কলমির লতা, ফাঁক দিয়ে দেখে
স্বার্থপর পৃথিবী চতুরতা
আঁধারে ডুবে শান্ত আলোর ভীড়ে
কোমায় থাকা ইচ্ছেগুলোর পাশে
তেপান্তরের মাঠ একলা বসে আছে।
তবুও আসবে এক নতুন সূর্য
কাঁচা পাকা দাঁড়ির গভীর গহীন কোনে
ঘুমিয়ে থাকা চামউকুনে
দেশলাই জ্বেলে অনুভব
করেছি আগুনের তাপমাত্রা
ছাঁকনিতে পারিনি ছাঁকতে চায়ের লিকার
ঠোঁট পুড়িয়ে পান করেছি ফুটন্ত শরীর।
…………………………………………..
অন্ধকার বসে আছে
খোলা আকাশের নিচে
অন্ধকার বসে আছে
মারণ অস্ত্র হাতে।
বিষণ্ণ চেতনা হেঁটে যায়
প্রখর রোদ গলি পথে
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়
তাড়া করে চলন্ত স্বপ্ন
বাঁক নেওয়া স্রোতের বিপরীতে
কুঁকড়ে যায় মৃত্যু, প্রহরী রাত।
সমুদ্রের বুকে মিটিমিটি নক্ষত্রের আলো
মুখ ঢেকেছে রুমালে
সবুজ ঘাসগুলি বঞ্চিত হয়ে
ঢলে পড়ছে ঘাতক ছায়ার কোলে।
…………………………………………..
ডানার সমুদ্রে মৃত্যু
পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখি
ডানার সমুদ্রে মৃত্যু পরোয়ানা জারি
বহনকারী কাগজের নৌকা
ছুঁটে চলছে ছায়া গলির খোঁজে।
আতঙ্কের ফাঁকা থালা দাঁড়িয়ে আছে
অন্ধকার নক্ষত্রের ভিড়ে
ক্ষীণ চাঁদের আলো মেখে
হতাশায় গেছে ডুবে।
নিথর সময় এসেছে কাছে
একগাঁছা দড়ি নিয়ে হাতে
ভাগাড়ের দরজায় অট্ট হাসে
মাক্স পড়ে ইতর পাখিরা বসে।
…………………………………………..
বসন্ত রং
শীতলা মন্দির পথে
বসন্ত দমকা হাওয়া
পাতা বিছিয়ে বলে কেমন আছো?
যেমন ছিলাম তেমন আছি
নাইবা পড়লো উঠোনে
চেনা বাগানের ফাঁক গলে
আলোর ঝিকিমিকি!
ধূলোর খেলা ঘরে এলো
আষাঢ়ে মেঘের হুংকার
তাতে কি হলো!
ভাঙা হাট ভেঙে গেল
পাবে না হাটে সবুজ শাক
গুম গুম শব্দ করতালির ডাক
যদি ইচ্ছে হয়
খুঁজে নাও হৃদয় মেলায়
সবুজের বসনে লাগবে
বসন্তের গাঢ় রং
আলোক রশ্মির সম্মুখে।
…………………………………………..
রোদ্দুর শুকায় স্বপ্ন
উন্মাদ রোদ্দুর
প্রভাতে দরজার কড়া নাড়ে
স্বপ্ন শুকাবে বলে
ভয়ে কুঁকড়ে যায় এক কোনে
বহুদিনের লালিত স্বপ্ন।
আকাশের কাছে প্রার্থনা করে
একফালি মেঘের ছাদ…
নাছোর রোদ্দুর প্রবেশ করে
আহত হৃদয় অতলান্তে
বাতাসের শীতল শরীর ভেদ করে
কুঁকড়ে যাওয়া ঘরে
তিলে তিলে শুকিয়ে হয় কাঠ
তবুও আশার আলো দেখে দিনরাত।
গভীর ঘুমে বেড়াতে যাই
চাঁদ নানির দেশে, তার আলো মেখে
ফিরে আসে দুঃখীনি মায়ের কাছে।
…………………………………………..
মোফাক হোসেন, MOFAK HOSSAIN জন্ম ৩.২.১৯৮১ সালে। পিতা-মোঃ ফজলুল হক, মাতা-মানুয়ারা বিবি। মুর্শিদাবাদ জেলার, সামশেরগঞ্জ থানার দুর্গাপুর গ্রামে।পঃবঃ, ভারত পিন নম্বর ৭৪২২২৪, গ্রন্থ-এখনো সময় আছে, খেয়াপারের কবিতা, ঈশ্বরের চশমা, mofakhossain@gmail.com
Recent Comments