মোবারক দীর্ঘ সময় নিয়ে অজু করে। কয়েকদিন হয় নামাজ ধরেছে। কিন্তু চার ওয়াক্ত নামাজ সময় মতো পড়লেও ফজরের নামাজ পড়া হয় না। কিন্তু আজ আল্লার খাস রহমতের কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। নামাজ শেষ করে মোবারক কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তির জন্য দোয়া করে। একজন কবি ও গীতিকার। আরেক জন হলেন রাজনৈতিক নেতা। পাশের বাড়ির মালিক ইয়াকুব সাহেবের জন্যও দোয়া করেন। একটা বিশেষ কারণে ইয়াকুব সাহেব মোবারক মিয়াকে দু’চোখে দেখতে পারতো না। মাঝেমধ্যে মদ খেয়ে আবোল তাবল আচরণ করতো। মোবারকের নাম ধরে গালিগালাজ ছুঁড়ে দিত। মোবারক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো। ইয়াকুব সাহেব তার দু’তলা বাড়ির বারান্দা থেকে গালাগাল দিতো।
হারামখোর মোবারক, তোর চোখে গরম শিসা ঢালবো। আমার বাড়ির দিকে নজর, বাড়ি দখলের চেষ্টা তোর পাছা দিয়ে …। আমার বাবা পুলিশের অফিসার ছিল। আমি বাটপাড় দেখলে ভালই চিনিরে বানচোত…।
মোবারক কি করবে বুঝে উঠতে পারতো না। ছটফট একটা ভাব অন্তরে খলখল করতো। একটা ব্যবস্থা নেবার ইচ্ছাও মনের ভেতর উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করে। বন্ধু বান্ধবের সাথে আলাপ করার পর সিদ্ধান্ত হয় চাচাকে একটা শিক্ষা দেয়া হবে। উচ্চ শিক্ষা টাইপের। শিক্ষাটা ডক্টরেট পর্যায়ের যাকে বলে চিপা প্যাদানী।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একদিন চাচাকে, মাতাল অবস্থায় মোবারকের বাড়িতে আনা হয়। রাত দশটার মতো হবে। বাইরে বৃষ্টি। ইয়াকুব চাচাকে দীর্ঘ সময় বৃষ্টিতে ভেজানোর পর মুখের বাঁধন খুলে দেয়া হয়।
ইয়াকুব সাহেব প্রথমে বুঝার চেষ্টা করেন, তার আসলে কি করা উচিৎ। কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখন মোবারকের বন্ধু বজলু ধমকে ওঠে। নো চাচা মিয়া, একদম কুল। একটা কথাও যদি বলেন। ন্যাংটা করাবো। তার পর মদের বোতল গলায় ঝুলিয়ে বাসায় পাঠাবো। আপনার স্ত্রী কন্যারা আপনাকে ন্যাংটা দেখবে। একবার ভাবুন অবস্থা। চাচা আপনার ন্যায্য পাওনা ছিল মাইর, মাইরের নাম ভাতিজা। নেশা পালায় ডরে। কিন্তু আপনি আমাদের চেয়ে বয়সে অধিক হওয়ায় শারীরিক মাইর মাইনাস করা হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে আপনার নেশা কেটে গেছে। এখন আপনাকে ডিজিটাল মাইন্ডের কিছু সাজা দেয়া হবে। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেন। তার আগে বলেন, আপনি যে মদ খান সরকারি অনুমোদন, অর্থাৎ লাইসেন্স কি আছে?
না।
তাহলে তো পুলিশী ব্যবস্থা নিতে হয়। সাথে পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার ডাকা হবে। রসালো করে দু’চার কথা লিখবে। এছাড়া আমার খালাতো ভাই এ আই জি। তার মাধ্যমে ধানমণ্ডি থানায় ফোন করাবো। যেখানে সামান্য মিথ্যের মিশেল থাকবে। প্ল্যানিংটা মন দিয়ে শুনুন। আপনি মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় এ বাড়িতে ঢুকে কাজের বুয়াকে নাজেহাল করেছেন এবং আপনাকে হাতে নাতে আটক করা হয়েছে। আর আটক করার পর আপনার কাছে দুই পিস ইয়াবা টেবলেট পাওয়া গেছে, যা আপনি সেবন করেন এবং বিক্রির সাথেও জড়িত। এর আগে আপনি আমাদের কাছে একাধিকবার ইয়াবা বিক্রি করেছেন, সবাই সাক্ষি। এই সবাই সামনে আস। চাচা মিয়াকে ভালোমতো দেখ। এ চাচাই তো আমাদের কাছে ইয়াবা বিক্রি করে। নাকি?
পাঁচ বন্ধু এক সাথে বলে ওঠে, হ্যাঁ হ্যাঁ এ চাচাই তো। ওনাকে না চিনার কি আছে। শুধু মোবারকই কোন কথা বলে না।
এখন বলেন, পুলিশ কি ডাকবো?
ইয়াকুব সাহেব কথা বলে না।
আহা, কথা না বললে তো হবে না। আপনিতো কথা না বলার লোক নন। গলা ফাঁটিয়ে কি সুন্দর সুন্দর গালি আপনি দেন। সে গালি শুনে আমাদের বন্ধু মোবারক খুবই মুগ্ধ, খুবই ধন্য। এখন কিছু একটা বলে আমাদেরকে ধন্য করুন। বেশি দেরি করলে আপনারই ক্ষতি হবে। ঐ ঘরে একটা মেয়ে মানুষ আনা হয়েছে দুই হাজার টাকা কন্ট্রাক্টে আপনাকে উপহার দেয়ার জন্য। সে আপনার সাথে আপনার বাসায় যাবে। বুঝেন এই গভীর রাত্রে কি একটি দৃশ্য সংঘটিত হবে আপনার বাসায়। আপনার অনার্সে পড়ুয়া মেয়ে মুক্তি দেখে খুবই প্রীতি হবেন।
কি ব্যবস্থা করবো। নাকি কথা বলবেন।
কি কথা বলবো?
পুলিশ ডাকবো কিনা। এই ব্যাপারে মতামত চাই। দেখেন চাচা, কোন জনমে আপনার বাবা সহকারী পুলিশ কমিশনার ছিলো। আর আমার ভাই বর্তমানে পুলিশের এ আই জি। পুলিশের ক্ষমতা সমাজে আপনার আন্দাজতো খারাপ না।
ঠিক আছে মেয়েলী ঘটনায় আপনাকে জড়াতে চাই না। আপনাকে মাফ করে দিতে চাই। মাফ করা মহত্ত্বের লক্ষণ। আমরা যে মহান লোক তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। এখন আপনাকে সামান্য একটা কাজ করতে হবে। তা হলো মোবারকের কাছে ক্ষমা চাইবেন। কি পারবেন না?
হ্যাঁ পারবো।
লক্ষ্মি চাচা। এই তো লাইনে আসছেন। মোবারক এই দিকে আছেন। মোবারক নিষেধ করে, আর বাড়াবাড়ির দরকার নাই। বজলু ক্ষেপে যায়, এই হালারপো, বাড়াবাড়ির কি আছে। ন্যায্য বিচার হওয়া কি খারাপ কিছু। এদিকে আয়। মোবারক কাছে আসে। ইয়াকুব চাচার পাশের চেয়ারে বসে। বজলু বিচারকের মতো নির্দেশ করে। ইয়াকুব চাচা, মোবারক সাহেবের হাত ধরে মাফ চান। অন্যায় হলো অন্যায়। ছোট বড় বলে কিছু নাই। অন্যায় যে করবে তার পানিসম্যান হওয়াই হলো ন্যায্য। মাফ চান …।
ইয়াকুব সাহেব, মোবারকের হাত ধরে মাফ চায়। বেচারা খুব ভয় পেয়েছে। তার শরীর কাঁপছে। চোখ কেমন যেন ঘোলাটে বজলু অভয় দেয়, চাচা ভয়ের কিছু নাই। মোবারক আপনাকে বাসায় দিয়ে আসবে।
মোবারক, ইয়াকুব সাহেবকে বাসায় দিয়ে আসো। দরজা খুলে ইয়াকুব সাহেবের অনার্স পড়ুয়া কন্যা মুক্তি এবং স্ত্রীসহ বাসার সবাই অবাক। প্রতিদিন যে ছেলেটাকে গালিগালাজ করে, সে ছেলেটাই কিনা অসুস্থ মানুষটাকে বাসায় পৌঁছে দিল। লজ্জায় কেউই মোবারকের দিকে তাকাতে পারে না।
এই ঘটনার পর থেকে, ইয়াকুব সাহেব মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। নামায রোযায় নিয়মিত। সামনের বছর নাকি হজ্ব করতে যাবেন। ভুলেও মোবারকের সামনে আসে না। সে ইয়াকুব চাচার জন্যও দোয়া করে। চাচার ভালো মতো হজ্বটা করা জরুরি।
মোবারকের দিনটা আজ বহু আগে শুরু হয়। আজকের দিনে কি কি করা হবে। এর একটা সূচি তৈরি করে। প্রথমে যেতে হবে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে হোটেল সুনামিতে। সেখান থেকে নাস্তা সেরে সকাল বারোটার মধ্যে কাকরাইল ফরিদপুর টাওয়ারে গিয়ে পরিচালক আই আর মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। খালা কুড়ি হাজার টাকা দিয়েছে। তার মেয়েকে নায়িকা হবার সুযোগ করে দিতে হবে। আই আর মন্ডল হলো নতুন নায়িকাদের জন্য মহামানব মেশিন টাইপের। মন্ডল প্রতি বছর নতুন নতুন নায়িকা তৈরি করেন। এরপর নিজের চিত্রনাট্য নিয়ে গাজির কাছে যেতে হবে। মোবারক বহু চেষ্টা করে। চিত্রনাট্যে দুটো গান ঢুকিয়েছে। তবে সে নিজে গান লেখেননি। কোন ভালো গীতিকার দিয়ে গান লেখাতে হবে। নতুন একটা গল্প লেখায় হাত দিতে হবে। গল্পটার বিষয়বস্তু কিছুটা স্পর্শকাতর হওয়ায় ভাবনা চিন্তা করে শুরু করতে হবে। গল্পটার নামও মোটামুটি ঠিক করা হয়েছে। এক ঢিলে তিন পাখি। গল্পটা পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে। জরুরি আরেকটা বিষয় নিয়েও একটা গল্প লেখা অতি জরুরি। তা হলো টিপাই নদী, নদীটার মুখে ইন্ডিয়া বাঁধ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বাঁধটা কার্যকর হলে বাংলাদেশ আর সবুজ শ্যামল থাকবে না। মরুভূমি হয়ে যাবে। কিন্তু সরকার কেনো যে কিছু বলছে না। এমন সুন্দর একটা কর্মসূচি সাজানোর পর মনটা বেশ ফুরফুরে লাগে। এমন ফুরফুরে মেজাজে হঠাৎ করেই গান গাওয়ার শখ জাগে। শখটা খুবই সাধ্যের মধ্যে। যখন তখন মিটিয়ে ফেলা যায়। মনের সাথে দেহের ভালো বোঝাপড়া। সাধ্যের মধ্যে শখের ব্যাপারটা দেখলেই বোঝা যায়। এখন কথা হলো কোন গানটা গাইবে। কবি নজরুলের গানটাই গাওয়া যায়। গানটা গাইতে দরজা জানালা বন্ধ করতে হবে। দরজা জানালা বন্ধ করে গান গাইবার ফায়দা হলো, গমগম একটা ভাব এবং সামান্য ইকো হয়ে সুরটারে মিষ্টি করে তোলে।
আমায় নহে গো ভালোবাসো… শুধু।
ভালোবাসো মোর গান
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে
গান হলে অবসান… ভালোবাসো মোর গান।
মোবারকের চোখে পানি আসে। চোখ ঝাপসা করে তোলে। একজন কবি এতোটা সুন্দর গান কি ভাবে লেখেন। কিভাবে বোঝলেন। গান শেষে কেউ তাকে মনে রাখবে না। আহারে, জাতীয় কবি হবার পরও কত অবহেলিত। অঘোষিতভাবে রবীন্দ্রনাথই যেন বর্তমানে জাতীয় কবি।
চোখে টল টলে পানি মোছার আগেই, কে যেনো দরজায় আওয়াজ করে। মোবারক একবার অনুমান করার চেষ্টা করে। আবার পরক্ষণেই ভাবে, শুধু শুধু অনুমান করে লাভ কি। দরজা খুলে দেখলেই তো হলো। তার পরও মনটা দ্রুত ভেবে নেয়। দরজায় একজন মেয়ে মানুষ। বাজি ধরার জন্য মনটা দাপাদাপি করে, মোবারক পাত্তা দেয় না। বাজি ফাজি আর ভালো লাগে না। তাছাড়া ইদানিং অনুমানও বেশি একটা ঠিক হয় না। কিন্তু আজকের অনুমানটা সম্ভবত ঠিক হবে। এমন একটা সম্ভাবনা নিয়ে। মোবারক দরজা খোলে। অনুমান একশো ভাগ সত্য। দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ইলা। যে বাংলা সিনেমার নায়িকা হতে চায়। ইলা তোমার ধারণা কিন্তু ঠিক না। আমি কিন্তু নায়িকা বানানোর কোন ক্ষমতা রাখি না।
আমি জানি।
তুমি জানো?
হ্যাঁ জানি, খুব ভালো করেই জানি এবং সে জন্যই আপনার কাছে এসেছি।
তার মানে কি?
মানে হলো, আমি বাংলা সিমেনার নায়িকা হতে চাই না।
তা হলে আসছো ক্যানো।
আসছি চলচ্চিত্রের অন্ধকার দিকটা দেখতে। দেখি অন্ধকারে কি আছে। শোনেন মোবারক ভাই। আপনি আমার জন্য চেষ্টা করবেন ঠিকই কিন্তু নায়িকা হবার জন্য নয়। শুধু অভিজ্ঞতার জন্য যতটুকু দরকার। আর বেশি অন্ধকার ধেয়ে আসলে আপনি আমাকে উদ্ধার করবেন। ব্যাস।
কিন্তু…
কিন্তু ফিন্তু না। আপনি আমাকে এই জগতের কয়েকজন পরিচালক এবং অভিনেতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন। আমি মাকে সেইসব লোকদের গল্প করবো মা তাতেই খুশিতে গদগদ হবে। মা একটা বড় ধরনের অসুখে ভুগছে। তার খুশির জন্যই আমি গান এবং নাচ শিখেছি। মা বেশি দিন বাঁচবে না।
খালার অসুখটা কি বলো তো
না ভাইয়া। ঐ অসুখটার নাম না শোনাই ভালো। আপনি জানেন তো। আমার স্টেপফাদার যে বিদেশী।
না তাতো জানতাম না।
যাক না জানলেই ভালো। অলাভজনক কোন কিছু না জানাই উত্তম।
আমিই বরং ভুল করলাম। গোপন কথাগুলো আপনাকে বলা ঠিক হয়নি। এখন দেখা যাবে আপনি আমাকে ঘৃণা করবেন। নইলে করুণা করবেন। আচ্ছা বলুন তো এমন কেন হয়?
কি ক্যামন হয়?
এই যে, এখন আপনি আমাকে খানিকটা ঘৃণা করছেন। কি করছেন না বলুন?
কই নাতো, ঘৃণা করার কি আছে।
কিন্তু মোবারক আশ্চর্য হলো। সত্যিই মনের ভেতর খুব হালকা অথচ অমসৃণ ধারালো একটি ঘৃণার বায়বীয়তা বয়ে যায়। একটি প্রশ্ন জানা দরকার নেই, তার পরও মনে চিমটি কাটে। ইলার মায়ের অসুখটা আসলে কি?
শোনেন মোবারক ভাই। প্রথমে আপনাকে যতটা বড় মনের মানুষ মনে করেছিলাম, আপনি কিন্তু আসলে অতটা বড় মনের মানুষ নন। কথাটা শুনে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন জানি, তারপরও বললাম। উচিত কথা বলার সামান্য এই রোগটা আমার আছে। তবে আমার এই রোগ মোটেও ছোঁয়াচে নয়। আর আমার মায়ের রোগটাও ছোঁয়াচে নয়। ছোঁয়াচে রোগ সম্বন্ধে আপনাকে আমি কিছু টিপস দিচ্ছি। এই ধরুন প্রায় এক ডজনের মতো সংক্রামক ব্যাধি একজন থেকে আরেক জনে যেতে পারে, যেমন সিফিলিস, গনোরিয়া, কুষ্ঠ, হুপিংকফ, স্কাবিস, ফাংগাস, ইত্যাদি। অনেকগুলো রোগ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়, আবার কতোগুলো রোগ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত যেমন সাধারণ ঠান্ডা লাগা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস, স্মলপক্স, মামস, জলাতঙ্ক ইত্যাদি।
মোবারক অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। আচ্ছা তুমি কি মেডিকেলে লেখাপড়া করছো? নাকি ফার্মেসী…
কোনটাই না। আমার জ্ঞান খুবই কম। অন্যদেরকে চমকে দেবার জন্য। জরুরি কিছু বিষয়ভিত্তিক আইটেম মুখস্থ করে রাখি। হা… হা…
মোবারক প্রসঙ্গকে অন্যদিকে রাখার জন্যই পুনরায় প্রশ্ন করে।
আচ্ছা ধরো চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাইরে অর্থাৎ ধরো, যদি এখন রাজনীতি বিষয়ে আলাপ হতো। তখন তুমি কি করতে।
গোপন রহস্যটা বলতে চাচ্ছিলাম না। তার পরেও বলি। কারণ, আপনি হলেন আমার পথপ্রদর্শক। বিশেষ করে নায়িকা হবার জন্য আপনার নির্দেশনা আমার খুবই দরকার, তাই বলছি। যে বিষয়টা আমি তেমন বুঝি না, সে বিষয়ে আমি কথা না বলে আরেক দিন ঐ বিষয়ে কথা হবে বলি। পরবর্তীতে ঐ বিষয়ের জরুরি বিষয়গুলো অবগত হয়ে কথা বলি। কিন্তু আমার কথা বলার ক্ষমতা ভালো থাকলেও গভীর জ্ঞান নাই বললেই চলে। আমার জ্ঞানবুদ্ধি যে কম, সে কথাটাও আমি কারো কাছে স্বীকার করি না, আপনার কাছে করলাম। কারণ হলো… আমি তোমাকে নায়িকা হবার সুযোগ করে দিবো। কিন্তু আমি যে তোমাকে নায়িকা হবার ব্যাপারে কিছুই করতে পারবো না, তাতো জানো।
আমি জানি, এ পর্যন্ত আপনি প্রায় সাত আট জনকে নায়িকা এবং মডেলিং এ সুযোগ করে দিয়েছেন। ইলোরাকে একটেলে আপনিই তো সুযোগ করে দিয়েছেন। তাছাড়া সেবা ফোনে নোভাকে তো আপনি…
তুমি এসব খবর কি করে পেলে।
আমি পাইনি। আমার মা পেয়েছে। মা খুবই বুদ্ধিমতী বিদূষী মহিলা। সে সব খবরাখবর নিয়েই আপনার কাছে এসেছি।
মায়ের বুদ্ধির একটা নমুনা আপনাকে বলি। আমার বাবা গ্রীসে চাকরি করতেন। সেখান থেকে চেষ্টা তদ্বীর করে। প্রেরটি ওমেনস নামে একটি এনজিও তৈরি করেন। সে এনজিওর চেয়ারম্যান করেন আমার মাকে। বাবা সব কিছু ঠিকঠাক করে গ্রীস থেকে একেবারে দেশে চলে আসেন। বাবার সারা জীবনের সঞ্চয় যা কিছু সব এনজিওতে ইনভেস্ট করেন। এমন কি আমরা যে ফ্লাটে থাকি সে ফ্লাটও মায়ের নামে। এনজিওর কনফারেন্স উপলক্ষে মা গ্রীসে যান। গ্রীসের নাগরিকত্বের জন্য মা পল উইলিয়াম নামে যুবা বয়সী এক লোককে বিয়ে করেন। সে লোকটি ছিল নিঃসন্তান নিঃসঙ্গ, তবে টাকার তিমি। বোয়াল মাছের তুলনা দিলে ঠিক হতো না, লোকটার এতো টাকা যে, তিমির সাথে তুলনা করতে বাধ্য হচ্ছি।
যথারীতি মা-বাবাকে ডিভোর্স করে। এবং দেশে আসার পর এনজিও অফিসে বাবাকে ঢুকতে বারণ করে। বাবাকে বারণ না করলেও বাবা আসলে কখনই ঐ অফিসে ঢুকতেন না। তার পরের ঘটনা বেশ করুণ। ঐ ঘটনা এখন থাক। মোবারক ভাই।
মোবারক গল্পটা প্রথমে শোনার ব্যাপারে তেমন আগ্রহী ছিল না, কিন্তু এখন তার খুবই আগ্রহ হচ্ছে। পুরো ঘটনাটা শোনার। বিশেষ করে ইলার বাবার পরিণতিটা জানতে খুবই ইচ্ছে করছে। মোবারক প্রায় অনুরোধই করে বসে।
আহা… ঘটনাটা খুলেই বলো। তোমার বাবার প্রসঙ্গটা। বাবা কোন রকম প্রতিবাদ না করে বাসা থেকে চলে গেলেন। কারণ ক’দিন পরই পলউইলিয়াম বাংলাদেশে আসেন এবং ফ্লাটে ওঠেন। আমি ক্লাস ফাইভে উঠলাম। মা বললেন, এই ভদ্রলোক তোমার বাবা, মানে পলউলিয়াম। বাবা চলে যাওয়ার পর আমার আর কি উপায় আমি সাদা চামড়ার লোকটাকে ডেডি বলা শুরু করলাম। এরপর আমি যখন ক্লাস সেভেনে উঠলাম তখন পলউইলিয়াম গ্রীসে যান। যাবার আঠারো দিন পর তিনি মারা যান। মা ছুটে গেলেন গ্রীসে, কারণ পলউইলিয়ামের ইন্স্যুরেন্সে অনেক টাকা জমা ছিল, সেই টাকা ওঠানোর জন্য মা এখনো গ্রীসে যাতায়াত করছেন, কিন্তু টাকা উঠাতে পারছেন না। কারণ টাকা পেতে হলে মাকে স্থায়ীভাবে গ্রীসে থাকতে হবে। কিন্তু মা ভরসা পাচ্ছে না স্থায়ীভাবে গ্রীসে থাকার। কারণ দেশে আমি আছি। মায়ের এনজিও আছে। ইস্কাটন রোডে তিন হাজার স্কয়ার ফিট ফ্লাট আছে ইত্যাদি।
কিন্তু তোমার বাবার কি হলো, উনি এখন কোথায়? বাবা এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। কাউকেই চিনেন না। সারাক্ষণ হাতের আঙ্গুলে কি যেন হিসেব করেন। মাঝেমধ্যে আমি বাবাকে দেখতে পাই রাস্তাঘাটে। বাবাকে দেখলে ভয় লাগে। অথচ বাবা কোন মানুষকে কখনই ক্ষতি করে না। এরপরও আমার ভয় লাগে। বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারি না। বাবাকে বাবা বলার সাহস পাই না।
মোবারক মিয়ার চিত্রনাট্য_আহসানুল ইসলাম : পর্ব-৩

Recent Comments