চারদিকে মৃত্যুর মিছিল।সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বের মানচিত্র।একমাত্র খবর কেবল সংক্রমণের, অঘটনের। পৃথিবীর খুব অসুখ করেছে আজ।বিশ্বের মহারথিরা হাল না ছাড়লেও এই অদৃশ্য শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে করতে ভীষণ ক্লান্ত।কোন ভাবেই হারানো যাচ্ছে না এই দুষ্ট ভাইরাসটিকে। একের পর একেক ধাপে উঠছে শোকের মাতম। মানুষগুলো হয়তোবা ক,দিনপর জলশুন্য হয়ে যাবে,পাথর হয়ে যাবে,,,,,
আর কাঁদতে পারবে নাহ…..
রাস্তায় রাস্তায় পরে থাকছে লাশের স্তুপ। স্বজনেরা সৎকার্য ও করতে পারছে না,ভাবা যায় কী কষ্ট!
এত্তোগুলো বছর যে মানুষটা বুকের জমিনে আগলে রেখেছিল, তাকে স্পর্শ করে দেখার ক্ষমতা রাখে না স্বজনেরা।আদর মেখে তার বুকে মাথা রাখতে পারে না, একটু কেঁদে বুক ভাসাতে পারে না। কী মর্মান্তিক, তাই না!
লকডাউনে যারা থাকছে তারাও কি কম অসহায়!
একা- একলা ঘরে বন্দী। যে সন্তানের জন্যে ছিলো তার প্রত্যেকটা মুহূর্ত, প্রতিটা পরিকল্পনা, সে সন্তানের সংস্পর্শে যেতে পারছে না। আলতো করে তার চোখে-মুখে চুমু খেতে পারছে না। যেনো সে ছুঁয়ে দিলে, স্পর্শ করে দিলে কিংবা হাঁচি বা কাশি দিলেই তৈরি হয়ে যাবে সন্তানের জন্যে মরণফাঁদ।
যে পুরুষটা এতোদিন ছিলো তার প্রিয়তমার বিশ্বস্ত সহযাত্রী, কোয়ারেন্টাইন তাকে দিয়েছে মৃত্যুর পূর্বে মমতাহীনভাবে আরো কয়েকবার মৃত্যু উপভোগের দুর্বিষহ স্বাদ। কী সাংঘাতিক!
পৃথিবীর সমস্ত সম্পর্কগুলো যেনো হয়ে উঠছে বেদনার্ত ভায়োলিন,ভীষণ রকমের অবিশ্বাসী, স্বেচ্ছাচারী উন্নাসিক। ক্রমে ক্রমে দুর্বোধ্য ও উৎকণ্ঠিত।
নূহ (আঃ) এর সময় যে ঝড় হয়েছিল তার চেয়ে কম নয় কোভিড-19এর ঘূর্ণিঝড়। সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সে শুধু মানুষকেই পেয়ে বসেছে নিশ্চিহ্ন করে দিতে।
মানুষ তো সৃষ্টির সেরা জীব। সে কী না করেছে বা করতে পেরেছে, তাই না..! তবে সে মৃত্যুর এ যাত্রাকে কেনো থামাতে পারছে নাহ!
কেনো মানুষকে এতো অসহায় আর অপারগ দেখাচ্ছে!
আসলে মানুষ প্রকৃতির একটা সৃষ্টি মাত্র। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।তবে হ্যা,সৃষ্টিকর্তা খুব যত্নে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
মানুষ যে খেলনাটি বেশি, পছন্দ করে, সেটা সে কাউকে দিতে চায় না, হারাতে চায় না,,যত্নে আগলে রাখতে চায়।
তবে সৃষ্টিকর্তা আজ কেনো তার এই খেলনাটি ভেংগেচুরে ফেলতে চাইছেন!
নিশ্চয়ই তিনি রুষ্ট, ক্রোধান্বিত।
এজন্য আমাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন। সমস্ত উপাসনালয়গুলো আজ নিরব,একলা।
কোলাহলহীন, গুনগানহীন।
এর একটাই কারণ, আমরা ভীষণরকমের লোভী আর স্বার্থপিপাসু হয়ে উঠেছি। আমাদের মধ্যে হিংসা,অহামিকা,লালসা আর বিবেকহীনতা এমনভাবে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে যে এগুলো দমাবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।
আজ আমরা পারছি না একটু সাধু হতে, একটু সুবোধ হতে। আমাদের মাঝে কোমলতা হারাতে বসেছে।অন্তত এইটুকু বুঝি, এ পৃথিবীর আরো ভালোবাসা চাই,আরো মমতা চাই। নিষ্ঠুরতা যেনো না হয় আমাদের সভ্যতার সাইনবোর্ড।
আজ থেকে ওসব বাদ। নতুন পথে হাটি একটা নতুন ভোরের আশায়।আমাদের প্রতি সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা অপার,অপরিমেয়। তার নিষ্ঠুরতাও নিশ্চয়ই তেমনি হবে, যার প্রমাণ এই মহামারী।
শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ানক বিবমিষা(অশান্তি)।
আজ সময় এসেছে নিজের ভেতর নিজেকে নতুন করে নির্মাণের। বিনির্মাণ করি যা কিছু সুন্দর, যা কিছু ভালোবাসাময়। হয়তোবা তখনি চলে আসবে একটা স্নিগ্ধ, শোভন, সবুজিমা, কলহাস্যে মাতবে আবার পৃথিবী।
ঈশ্বর বড়ই বিচিত্র, রহস্যময়। তাকে বুঝবার সাধ্য মানুষের সামান্যই আছে। সলজ্জ, নতমুখে একটু প্রার্থনা করি। অভিমানী সৃষ্টিকর্তার একটু বন্দনা করি।আজ শুধু প্রার্থনারই সময়।
ইমান যেখানে দৃঢ়, সেখানে মৃত্তিকা বিশ্বস্ত হবেই।এক দিন সত্যি সত্যি বেঁচে যাওয়া বিশ্বাসী মানুষগুলোর আরাধনায় নতজানু হবে ক্লেশ-কষ্ট,
দুঃখ-জরা।
মহামান্য সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পায় আবার পৃথিবী হাসবে, বসন্ত আসবে।
” হে করুণাময় প্রভু…..
পূর্ণ করো তোমার সর্বজনীন করুণাপাত্র”
ইবাদতে এবাদতে……
ভোর হতে রাত শেষে……
রং মাখো, দিল রাখো……
ইশকের বসনে…….
কলবের দেয়ালে……
সযতনে আড়ালে……
ডুবে যাও, তাঁকে পাও….
আলোমাখা গহনে…..
০৯/০৪/২০২০
নারায়ণগঞ্জ
Recent Comments